Thursday, August 27, 2009

বেদাঙ্গ

বেদের পরিপূরক হিসেবে বেদাঙ্গকে ব্যবহার করা হত। বেদের অঙ্গ বলে এর নাম বেদাঙ্গ। এই বিষয়গুলি বেদ পাঠ এবং যজ্ঞ অনুষ্ঠানে সাহায্য করত। এদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ষড়বিংশ ব্রাহ্মণে ( বেদের আমলে বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞানুষ্ঠান হত।এই সব যজ্ঞ কিভাবে করতে হবে, সেটা যার মধ্যে সবিস্তার বর্ণিত থাকত; তাকে ব্রাহ্মণ বলা হয়। যেমন ঋগ্বেদের ঐতরেয় ব্রাহ্মণে রাজসূয় যজ্ঞ কিভাবে করতে হবে, তার সবিস্তার বর্ণনা আছে।) ।“চত্বারো‍‌‍‌হস্যৈ(স্বাহায়ৈ) বেদাঃ শরীরং ষড়ঙ্গান্যঙ্গানি ।৪।।৭” অর্থাৎ ৪ টি বেদ হলো শরীর এবং ৬ টি বেদাঙ্গ হলো তাদের অঙ্গ। এই ৬ টি বেদাঙ্গ হলো:-


১। শিক্ষা
২। ছন্দ
৩। ব্যাকরণ
৪। নিরুক্ত
৫। জ্যোতিষ
৬। কল্প
১।শিক্ষা : - বেদ অধ্যয়ন সেকালে নিত্য কর্ম ছিল। যজ্ঞেও বেদ পাঠের প্রয়োজন হত। দৈনিক পাঠকে “স্বাধ্যায়” বলা হত।শিক্ষক বেদের শব্দরাশির নির্ভুল উচ্চারণ শেখাতেন।বেদের ‘সংহিতা’ অংশই প্রধানতঃ শিক্ষার আলোচনার বিষয় ছিল। (সংহিতা:- বেদের কর্মকাণ্ডে ‘সংহিতা’ অংশই প্রাচীনতম রচিত অংশ।) ‘সংহিতা’ দুভাবে পাঠ করা হত।অব্যাকৃত এবং ব্যাকৃত পদপাঠ।সংহিতায় পরষ্পর সন্নিহিত অবস্থায় যেমন পদগুলি (নামপদ ও ক্রিয়াপদ) আছে, তেমন ভাবে রেখে পাঠ করাকে অব্যাকৃত পদপাঠ বলে।ব্যাকৃত পদপাঠে প্রতি পদকে (নামপদ ও ক্রিয়াপদ) সন্নিবদ্ধ রূপ হতে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে পৃথকভাবে উচ্চারণ করা হয় বা হত। দক্ষিণ ভারতে এখনও এভাবে পাঠ করা হয়। গোটা পাঠকে শুধু পদপাঠও বলা হয়।সংহিতা পাঠের সংঙ্গে পদপাঠের সর্ম্পক নির্দ্দেশ করতে “প্রাতিশাখ্য” গ্রন্থের উদ্ভব হয়। এইগুলি শিক্ষার আদিগ্রন্থ।
২।ছন্দ : - ছন্দ শিক্ষার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই যুক্ত।ঋক্ সংহিতার এবং সাম সংহিতার সব মন্ত্রই ছন্দোবদ্ধ।অবশ্য সাম সংহিতার সব মন্ত্রই গাওয়া হত। অথর্ব সংহিতারও বেশীর ভাগ মন্ত্রই ছন্দোবদ্ধ। সংহিতা, ব্রাহ্মণ এবং উপনিষদে নানা সূত্রে ছন্দের প্রসঙ্গ আছে। সকল প্রতিসাখ্যের শেষে সামবেদের নিদানসূত্রে শাংখ্যায়ন শ্রৌতসূত্রে এবং বিভিন্ন অনুক্রমণিকাতে ছন্দ সম্বন্ধে উল্লেখ আছে। পিঙ্গলের ছন্দঃসূত্রকেই বেদাঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এটিকে বিশুদ্ধ ভাবে বেদাঙ্গ গণ্য করা হয় না। কারন, এটির প্রথম ৪ অধ্যায়ে বৈদিক ছন্দের আলোচনা আছে, তারপর অতিরিক্ত ভাবে লৌকিক ছন্দেরও বিবরণ আছে।( এটা বিশুদ্ধবাদীদের মত)

৩।ব্যাকরণ : - ব্যাকরণের সঙ্গেও আবার দেখা যাচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক যোগ আছে এবং থাকাটাই সঙ্গত।অব্যাকৃত এবং ব্যাকৃত পদপাঠের জন্য সন্ধির নিয়মগুলি জানা দরকার। মন্ত্রকে যজ্ঞে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সন্ধির নিয়মগুলি না জানলে মুশকিল। তাই ব্যাকরণের জ্ঞান প্রয়োজন।
৪।নিরুক্ত : - নিরুক্তের সঙ্গে নিঘন্টুর ঘনিষ্ট যোগ রয়েছে।নিঘন্টু, বৈদিক শব্দভান্ডার। নিঘন্টুর মত তখন আরও শব্দভান্ডার ছিল, কিন্তু র্দুভাগ্য ক্রমে সেগুলো বিলুপ্ত। এই নিঘন্টুর ব্যাখ্যা যাঁরা করেছেন, তাঁরা হলেন- যাস্ক, স্থৌলষ্টিবি এবং পৌনঃপুনি। এর মধ্যে যাস্কের নিরুক্ত পাওয়া যায়। নিরুক্তের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ- ভেঙ্গে বলা। অতি সরলীকৃত ভাবে বলা ভাল, নিরুক্ত বেদের ‘নোটস্’ বা টীকা।
৫। জ্যোতিষ : - জ্যোতিষ ৫ ম বেদাঙ্গ। যিনি যজ্ঞ করতেন, তাঁকে ঋত্বিক বলা হয়। ঋত্বিকের যজ্ঞের কাল নিরুপণ করতে হত। তাই তাঁকে শুভ কাল যজ্ঞের জন্য বের করতে হত। তাই জ্যোতিষের উদ্ভব। সোজা ভাষায় তিনি পঞ্জিকা তৈরী করতেন।
৬। কল্প : - কল্পগুলি সূত্রাকারে গ্রথিত। যজ্ঞের প্রয়োগবিধি এবং গার্হস্থ জীবনের প্রয়োগবিধির বর্ণনা এতে আছে।



ঋণ ও উৎস: - শ্রীহিরন্ময় ভট্টাচার্য্য রচিত “ঋগ্বেদের পরিচয়”। হরফ প্রকাশনী কর্ত্তৃক প্রকাশিত বেদের মুখবন্ধে প্রাপ্ত।

No comments:

Post a Comment